গত ৩১ আগস্ট বিদ্যুৎ বিভাগের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় ওই নথি উত্থাপন করা হয়।
তবে আগস্ট মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৩৭ শতাংশ বলে দাবি করেছেন বাস্তবায়নকারী সংস্থার কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও, প্রকল্পের কাজের ওপর এর খুব বেশি প্রভাব পড়েনি।
সিপিজিসিবিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মোত্তালিব ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা আমাদের সময়সূচি অনুযায়ী ভালো অগ্রগতি করছি এবং মহামারিজনিত কারণে কয়েক মাস যেসব কাজ ব্যাহত হয়েছে তা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হব বলে আশা করি।’
২০১৪ সালে ‘মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎকেন্দ্র’ শীর্ষক প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
এটি দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত, কারণ এখানে আমদানি করা কয়লা আনার জন্য গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরি, চ্যানেল খনন, কয়লা খালাসের জন্য জেটি এবং অন্য অবকাঠামো নির্মাণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ও ধলঘাটায় অবস্থিত এ বিদ্যুত প্রকল্পের জন্য ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি ৩ লাখ টাকা সরবরাহ করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এবং নিজস্ব তহবিল থেকে ৪ হাজার ৯২৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা অর্থায়ন করবে সিপিজিসিবিএল।
সিপিজিসিবিএল কর্মকর্তারা বলছেন, মাতারবাড়ি প্রকল্পটি একটি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি (ইউএসসিটি) ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হওয়ায় এর জ্বালানি দক্ষতা হবে ৪১.৯৯ শতাংশ, যেখানে সাধারণ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রের জ্বালানি দক্ষতা ৩৪ শতাংশ।
এক হাজার পাঁচশ একর জায়গার ওপর গড়া মাতারবাড়ী তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে কয়লা চালিত দুটি থার্মাল ইউনিট থাকবে, যার প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা ৬০০ মেগাওয়াট।
মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প নির্মাণের সরকারি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে এবং ২০১৩ সালের অক্টোবরে এটি পরিবেশগত অনুমোদন পায়। প্রকল্পের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয় ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে এবং তা ২০২৩ সালের জুনে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা আমদানির জন্য মাতারবাড়ী বন্দর নামে একটি নতুন গভীর সমুদ্রবন্দরও তৈরি করা হবে যার মধ্যে একটি ৭৬০ মিটার লম্বা কন্টেইনার ও বহুমুখী টার্মিনাল অন্তর্ভুক্ত থাকবে। বন্দর টার্মিনালটিতে একটি ফুয়েল বার্থ, জ্বালানি পরিবহন সুবিধা এবং দুটি কয়লা হ্যান্ডলিং জেটি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। চ্যানেলের দৈর্ঘ্য হবে ১৪ কিলোমিটার, প্রস্থ ২৫০ মিটার এবং সর্বোচ্চ গভীরতা প্রায় ১৮.৫ মিটার।
সিপিজিসিবিএল কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে বছরে ৩৭.৩ লাখ টন (মেট্রিক) কয়লা লাগতে পারে, যা ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে মাতারবাড়ী বন্দরের মাধ্যমে আমদানি করা হবে।
২০১৭ সালের আগস্টে সুমিতুমো, তোশিবা ও আইএইচআই নিয়ে গঠিত কোম্পানিকে প্রকল্পের প্রকৌশল, সরঞ্জাম সংগ্রহ ও নির্মাণ কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়।
বন্দর নির্মাণ এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রের অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ ও এ সম্পর্কিত বিভিন্ন কাজের জন্য তোশিবা প্লান্ট সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেসকে সাবকন্ট্রাক্ট দেয় সুমিতুমো। এছাড়া পেন্টা-ওশান কনস্ট্রাকশনকে মাতারবাড়ী বন্দর সম্পর্কিত নির্মাণকাজের জন্য ১৪০ কোটি মার্কিন ডলারের সাবকন্ট্র্যাক্ট প্রদান করা হয়।
সিপিজিসিবিএলের এক কর্মকর্তা জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য স্টিম টারবাইন ও জেনারেটর সরবরাহ করবে তোশিবা এবং বয়লার সরবরাহ করবে বলে আইএইচআই।
তিনি আরও জানান, সুমিতুমো সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কাজের জন্য ৮৪ কোটি ডলারের একটি কন্ট্র্যাক্ট কোরিয়া ভিত্তিক কোম্পানি পেসকো ইঅ্যান্ডসি-কে দিয়েছে।